Tuesday, 11 July 2023

ডান হাত অকেজো হয়ে যাওয়া

 

সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) হতে মুসলিম বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ) এর সম্মুখে এক ব্যক্তি বাম হাতে আহার করছিল। নবী করীম (সাঃ) তাকে নসীহত করে বললেন, ডান হাতে আহার কর। কিন্তু ঐ হতভাগ্য এই বলে নসীহত প্রত্যাখ্যান করল যে,আমি ডান হাতে খেতে পারি না। অথচ তার ডান হাতে কোন অসুবিধা ছিল না। তার ঐ বেপরোয়া উত্তরের জবাবে নবী করীম (সাঃ) বললেন,তুমি ডান হাতে খেতে পারবে না,অতঃপর তার ডান হাত এমন অকেজো হয়ে গেল যে, উহা আর মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারত না। 

মূর্তির পেট হতে কথা বের হওয়া 

বোখারী শরীফের বর্ণনামতে হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, একদা আমি কতিপয় মূর্তির সম্মুখে উপস্থিত ছিলাম । তথায় আমি দেখতে পেলাম  এক মূর্তিপূজক একটি বাছুরকে মূর্তির নামে উৎসর্গ করে জবাই করল। ঐ সময় হঠাৎ বিকট শব্দ একটি মূর্তির পেট হতে নিম্নের কথাগুলি শোনা গেল ঃ

"হে শক্তিশালী মানুষ! একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হল এই যে, জনৈক স্পষ্টভাষী বলছেন - আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত  ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই "।

হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, লোকেরা এই বিকট শব্দ শুনে ভয়ে পেয়ে গেল । কিছুক্ষণ পরেই অনুরূপ শব্দ হবার পর বলা হল যে, মোহাম্মদ (সাঃ) (আল্লাহর) নবী এবং তিনি "লাইলাহা ইল্লাল্লাহুর" তা'লিম দেন ।

উক্ত ঘটনায় মূর্তির পেট হতে ‌'জিন' শব্দ করে নবী করীম (সাঃ) এর তা'লিমের তালক্বীন দিয়েছে । সুতরাং এই মু'জিযাটি ছিল জিন সম্পর্কিত। 

Sunday, 9 July 2023

একদল জিনের ইসলাম গ্রহণ

 

লানায়েলু নবুওয়তে ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বায়হাকী বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) একবার মক্কায় সাহাবায়ে কেরামগণকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেহ জিন দেখতে চাইলে আজ রাতে আমার নিকট এস। 

    ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে একমাত্র আমিই তথা উপস্থিত হলাম। রাসূলে পাক (সাঃ) আমাকে সঙ্গে করে মক্কার একটি পর্বতশৃঙ্খে আরোহণ করলেন। সেখানে তিনি স্বীয় কদম মোবারক দ্বারা মাটিতে একটি বৃত্ত অঙ্কন করে আমাকে তার ভিতর বসে থাকতে নির্দেশ দিলেন। আমি হুজুরের নির্দেশমতো এটার ভিতর বসে রইলাম। 

    এদিকে রাসুলে পাক (সাঃ)  কিছুদূর অগ্রসর হয়ে এক স্থানে দাঁড়িয়ে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত শুরু করলেন। এমন সময় জিনদের একটি বিরাট দল নবী করীম (সাঃ)  কে বেষ্টন করে দাঁড়াল। তাদের কারণে তখন আমি নবী করীম (সাঃ) কে দেখতে পাচ্ছিলাম না। 

    তারা বলেছিল কে, আপনার নবুওয়তের সাক্ষ্য প্রদান করে? প্রিয় নবী (সাঃ) নিকটই একটি বৃক্ষ দেখিয়ে বললেন, এই বৃক্ষটি আমার নবুওয়তের সাক্ষ্য প্রদান করলে তোমরা কি তা মেনে নেবে? তারা বলল হ্যাঁ আমরা মেনে নেব।

    অতঃপর আল্লাহর রাসূল  ঐ বৃক্ষর নিকটে আসতে আহবান করলেন, সঙ্গে সঙ্গে সে হাজির হয়ে রাসূলে পাক (সাঃ) রেসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করল এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত সকল জিন তার উপর ঈমান এনে ইসলাম গ্রহণ করল। 


Saturday, 8 July 2023

রাসুলুল্লাহ ( সাঃ ) এর আগমনের পূর্বে অলৌকিক ঘটনা


হাদিসবিদরা এ ঘটনাকে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ )এর  এক প্রকার মুজেযা রূপে আখ্যায়িত করেছেন, যাকে হাদিসের পরিভাষায় "আরহাসাত" বলা হয়। অর্থাৎ তা ছিল নবুওত প্রমাণের ভিত্তি ও ভূমিকা। কারণ মুজেযা হয় নবুয়তের দাবীতে নবীর সমর্থনের প্রকাশ। আর এই ঘটনা ছিল নবুওতের দাবীতে নবীর সমর্থনের প্রকাশ।আর এই ঘটনা ছিল নবুওতদাবীর পূর্বে বরং নবীর জন্মের ও পূর্বে। হাবী করীম ( সাঃ ) জন্ম লগ্নে ও তার পূর্বে এই ধরনের কয়েক প্রকার "আরহাসাত" প্রকাশ পেয়েছে।। হাতি বাহনীর ঘটনা ঐ সবের অন্যতম। 

ঘটনা 

সৌদি আরবের দক্ষিনাংশে ইয়ামান ও ইয়ামনের বরাবর পশ্চিমে লোহিত সাগরের অপর পাড়ে আফ্রিকার সে বিখ্যাত হাবাশা দেশটি অবস্থিত যা বর্তমানে ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়া নামে পরিচিত। 

৫২৬ খ্রিস্টাব্দের  খ্রিস্টান শাসক আবরাহা ইয়ামান দখল করে নাই এবং ধীরে ধীরে সে গোটা আরবের ইসায়ী ধর্ম প্রচারের সাথে সাথে আরবের ব্যবসায়ীদের হাত থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দখল করে নেয়ার চেষ্টা চালায়। সেই উদ্দেশ্যে ইয়ামেনের রাজধানী সানাতে এক বিরাট গির্জা তৈরি করে সে কা'বার পরিবর্তে ঐ গির্জা জিয়ারত করার জন্য গোটা আরবে ঘোষণা দেয়। তখন আরবরা ক্ষিপ্ত হয়ে সেই গির্জায় আগুন লাগিয়ে দিল কিংবা তাকে অপমান করার উদ্দেশ্যে গোপনে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে । আর এই অজুহাতে আবরাহা কাবা ঘরকে ধ্বংস করার অভিযান চালায়। 

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১৩ টি হাতিশহ ৬০ হাজার হাবসী সৈনে্র এক বাহিনী নিয়ে এসে মক্কার দিকে অগ্রসর হল। মক্কার কাছাকাছি  বাহিনীকে থামালো এবং মক্কার সর্দারকে কাছে তার দূত পাঠালো এই বলে যে, বাদশা মক্কা বাসিকে আক্রমণ করতে আসেনি। শুধু কা'বা ঘর ভেঙে দেওয়া তার উদ্দেশ্য এই বিষয় নিয়ে তিনি তার সর্দারদের সাথে আলোচনা করতে চান। 

প্রিয় নবী ( সাঃ) দাদা আব্দুল মুত্তালিব সবচেয়ে বড় সর্দার ছিলেন। তিনি দূতের সাথে আবরাহার কাছে গেলেন তাঁর চেহারা ও ব্যক্তিত্ব এমন ছিল যে আবরাহা তাঁকে দেখেই নিজের আসন থেকে উঠে সম্মানের সাথে তাঁকে নিয়ে আলোচনায় বসল। কোন কোন বর্ণনায় মুত্তালিবের ২০০ টি উঠছিল। আলোচনা কালে আব্দুল মুত্তালিব তাঁর উট ফেরত চাইলে আবরাহা বলল, আপনি কা'বা ঘরের খাদেম, আর আমি সেই ঘরটি ভেঙে দিতে এসেছি। ঐ ব্যাপারে আপনাকে পেরেশান মনে হচ্ছে না অথচ উটের জন্য এত ব্যস্ত হলেন? জবাবে আব্দুল মুত্তালিব  বলেন ওই ঘরের মালিক যিনি তিনিই তার ঘরের হেফাজত করবেন। আমি তার মালিক নই ।আমি যেসব উটের মালিক তা আমাকে দিয়ে দিন ।তখন আবরাহা তাঁর উটগুলো ফিরিয়ে দিল। 

এরপর আবরাহা  যখন মক্কার দিকে এগিয়ে আসতে চাইল তখন তাঁর নিজস্ব হাতি মাহমুদ হঠাৎ বসে পড়ল এবং মাহুত তাকে মেরে জখম করা সত্ত্বেও মক্কার দিকে এক কদমেও এগোতে রাজি হলো না। এই সময় হঠাৎ বিরাট একদল পাখি ঠোঁটে ও পায়ে করে কঙ্কর নিয়ে এসে সেই বাহিনীর উপর বৃষ্টির মত ফেলতে লাগলো। যার উপরে সেই পাথর পড়তো তার শরীর গলে যেতো । গায়ের গোস্ত খুলে পড়তে এবং রক্ত পানির মত বয়ে যেত। আবরাহা  এইভাবে মরে গেল। ৬০ হাজারের গোটা বাহিনী পালাতে থাকলো ও পথে পথে মরতে মরতে শেষ হয়ে গেল। 

এই ঘটনা রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) জন্মের 50 দিন আগে ঘটেছিল। আরবের এই ঘটনা খুব বিখ্যাত ছিল। সূরা ফীল নাযিল হওয়ার সময় মক্কার হাজার হাজার এমন লোক জীবিত ছিল যাদের চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে । সমস্ত আরববাসী একথা স্বীকার করত যে, একমাত্র আল্লাহর কুদরতেই  ঐ বাহিনী ধ্বংস হয়েছিল। 

Tuesday, 4 July 2023

প্রথম মানব ও প্রথম নবীর জীবনী


কোরআনে বর্ণিত পৃথিবীর প্রথম মানুষ, প্রথম পয়গম্বর বা নবী হযরত আদম (আঃ )। আল্লাহ  আদম ( আঃ)  পাঁজর থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন মানবজাতির মা হিসাবে ।

 পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, আল্লাহতালা যখন ফেরেশতাদেরকে জানালেন যে, তিনি পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি নিয়োগ করতে যাচ্ছেন তখন ফেরেশতারা বলল -

"আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি "

তখন আল্লাহ বলেন "নিঃসন্দে আমি যা জানি তোমরা তা জানো না "


আল্লাহ তাআলা  আদম (আঃ ) কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন তারপর ইনার দেহে প্রাণ সঞ্চার করেন । হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয় আদম ( আঃ ) এর পাঁজরের একটি হাড় থেকে ।সৃষ্টির পর তাদের আবাস হয় বেহেস্ত বা জান্নাত । আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তা কুলকে আদেশ করেন  আদম ( আঃ ) কে সিজদা করার জন্য কিন্তু ইবলিশ তাতে রাজি হয়নি ইবলিশ ব্যতীত সকল ফেরেশতা এই আদেশ পালন করেন কোরানে বলা হয়েছে 

"আমি আদমকে পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করিব " 

                                                                                                   ( সূরা আল বাকারা,  আয়াত ৩০ )

কোরান শরীফে উল্লেখ 

কোরআন শরীফে আদম ( আঃ ) এর নাম ১০ টি সূরার ৫০ টি আয়তে উল্লেখ করা হয়েছে 

১।     সূরা আল বাকারা 

২।     সূরা আল ইমরান

৩।    সূরা আল আরাফ 

৪।     সূরা ইশরা

 ৫।    সূরা আল কাহফ 

৬।     সূরা  ত্বোয়া-হা

৭।     সূরা আল হিজর

৮।     সূরা ছোয়াদ

৯।     সূরা আল মায়িদাহ

১০।     সূরা ইয়াসীন 

আদম (আঃ ) এর নাম গুণাবলী ও কার্যাবলী আলোচনা করা হয়েছে 

                                         আদম (আঃ ) সৃষ্টি 

আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহপাক প্রথমে জিব্রাইল (আঃ)  ও মিকাইল (আঃ)  নামক দুই ফেরেশতাকে পাঠালেন তারা দুজনে মাটির দোহাই শুনে ফেরত গেল এরপর আল্লাহপাক আজরাইলকে (আঃ)  পাঠালেন তিনি মাটির দোহাই অগ্রাহ্য করে পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে বিভিন্ন রঙের মাটি সংগ্রহ করলেন এবং আল্লাহর কাছে নিয়ে গেলেন আল্লাহপাক এই মাটি দিয়ে নিজ হাতে আদম (আঃ) আকৃতি দিলেন এবং রুহ ফুকে দিলেন আদম (আঃ) পেলেন জীবন 

                                       আদম (আঃ)  কে সেজদা করার হুকুম 

আল্লাহপাক আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর ফেরেশতাদেরকে বললেন  তোমরা আদমকে সিজদা করো আল্লাহর আদেশে সব ফেরেস্তা আদমকে সেজদা করলো কিন্তু শয়তান সেজদা করলো না ।  সে বলল আমি আগুনের তৈরি আর আদম মাটির তৈরি আল্লাহর আদেশ অমান্য করার আল্লাহপাক শয়তানকে বেহেশত থেকে বিতরণ করলেন আর আদম আলাই সালাম ও তার স্ত্রী হাওয়াকে জান্নাতে রাখলেন ।

আদম (আঃ) ও মা হাওয়াকে  বেহেশত থেকে বিতাড়ন

সৃষ্টির পর আদম (আঃ) ও মা হাওয়ার অবস্থান ছিল বেহেস্তে সেখানে তাদের জন্য নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল ।শয়তানের প্ররোচনায় আদম (আঃ) ও মা হাওয়া উভয় নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেললেন । আল্লাহতালা শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন ।আদম (আঃ) ও মা হাওয়া পৃথিবীর ভিন্ন দুটি স্থানে অবতরণ করেন আদম আঃ অবতরণ করেন সিংহলের আদম পাহাড়ে আর মা হাওয়া অবতরণ করেন সৌদি আরবে হেজাজে দীর্ঘদিন পর মক্কার আরাফাত নামক প্রান্তে তাদের পুন মিলন হয় ।

আদম (আঃ) এর  পৃথিবীর জীবন 

পৃথিবীতে আগমনের পর আদম (আঃ) ও মা হাওয়াকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কাবাগৃহ নির্মাণের আদেশ প্রদান করা হয় । কাবা নির্মিত হয়ে গেলে তাদেরকে  তাওয়াফ করার আদেশ দেওয়া হয় বর্ণিত আছে আদম কর্তৃক নির্মিত কাবা নূহের মহাপ্লাবন পর্যন্ত অক্ষত ছিল ।

আদম (আঃ) এর পরিবার 

আদম (আঃ) এর স্ত্রী ছিলেন হাওয়া পৃথিবীতে আগমনের পর তাদের যে অনেকজন সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করেছিল । আলোচিত সন্তান হলেন হাবিল, কাবিল ,আকলিমা লাইউদা ।তাদের সন্তান শিস (আঃ) আল্লাহর একজন নবী হয়েছিলেন 

আদম (আঃ) এর ইন্তেকাল ও কবর 

তিনি ৯৩০ বা ৯৫০ বা ১০০০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন । ইনার ইন্তেকালের দিনটি ছিল শুক্রবার  ।আদম আলাই সালামকে জাবালে কুবায়সে বা সিংহলের পাহাড়ে যেখানে প্রথম অবতরণ করেছিলেন বা বায়তুল মুকাদ্দাসে দাফন করা হয় ।