Saturday, 8 July 2023

রাসুলুল্লাহ ( সাঃ ) এর আগমনের পূর্বে অলৌকিক ঘটনা


হাদিসবিদরা এ ঘটনাকে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ )এর  এক প্রকার মুজেযা রূপে আখ্যায়িত করেছেন, যাকে হাদিসের পরিভাষায় "আরহাসাত" বলা হয়। অর্থাৎ তা ছিল নবুওত প্রমাণের ভিত্তি ও ভূমিকা। কারণ মুজেযা হয় নবুয়তের দাবীতে নবীর সমর্থনের প্রকাশ। আর এই ঘটনা ছিল নবুওতের দাবীতে নবীর সমর্থনের প্রকাশ।আর এই ঘটনা ছিল নবুওতদাবীর পূর্বে বরং নবীর জন্মের ও পূর্বে। হাবী করীম ( সাঃ ) জন্ম লগ্নে ও তার পূর্বে এই ধরনের কয়েক প্রকার "আরহাসাত" প্রকাশ পেয়েছে।। হাতি বাহনীর ঘটনা ঐ সবের অন্যতম। 

ঘটনা 

সৌদি আরবের দক্ষিনাংশে ইয়ামান ও ইয়ামনের বরাবর পশ্চিমে লোহিত সাগরের অপর পাড়ে আফ্রিকার সে বিখ্যাত হাবাশা দেশটি অবস্থিত যা বর্তমানে ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়া নামে পরিচিত। 

৫২৬ খ্রিস্টাব্দের  খ্রিস্টান শাসক আবরাহা ইয়ামান দখল করে নাই এবং ধীরে ধীরে সে গোটা আরবের ইসায়ী ধর্ম প্রচারের সাথে সাথে আরবের ব্যবসায়ীদের হাত থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দখল করে নেয়ার চেষ্টা চালায়। সেই উদ্দেশ্যে ইয়ামেনের রাজধানী সানাতে এক বিরাট গির্জা তৈরি করে সে কা'বার পরিবর্তে ঐ গির্জা জিয়ারত করার জন্য গোটা আরবে ঘোষণা দেয়। তখন আরবরা ক্ষিপ্ত হয়ে সেই গির্জায় আগুন লাগিয়ে দিল কিংবা তাকে অপমান করার উদ্দেশ্যে গোপনে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে । আর এই অজুহাতে আবরাহা কাবা ঘরকে ধ্বংস করার অভিযান চালায়। 

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১৩ টি হাতিশহ ৬০ হাজার হাবসী সৈনে্র এক বাহিনী নিয়ে এসে মক্কার দিকে অগ্রসর হল। মক্কার কাছাকাছি  বাহিনীকে থামালো এবং মক্কার সর্দারকে কাছে তার দূত পাঠালো এই বলে যে, বাদশা মক্কা বাসিকে আক্রমণ করতে আসেনি। শুধু কা'বা ঘর ভেঙে দেওয়া তার উদ্দেশ্য এই বিষয় নিয়ে তিনি তার সর্দারদের সাথে আলোচনা করতে চান। 

প্রিয় নবী ( সাঃ) দাদা আব্দুল মুত্তালিব সবচেয়ে বড় সর্দার ছিলেন। তিনি দূতের সাথে আবরাহার কাছে গেলেন তাঁর চেহারা ও ব্যক্তিত্ব এমন ছিল যে আবরাহা তাঁকে দেখেই নিজের আসন থেকে উঠে সম্মানের সাথে তাঁকে নিয়ে আলোচনায় বসল। কোন কোন বর্ণনায় মুত্তালিবের ২০০ টি উঠছিল। আলোচনা কালে আব্দুল মুত্তালিব তাঁর উট ফেরত চাইলে আবরাহা বলল, আপনি কা'বা ঘরের খাদেম, আর আমি সেই ঘরটি ভেঙে দিতে এসেছি। ঐ ব্যাপারে আপনাকে পেরেশান মনে হচ্ছে না অথচ উটের জন্য এত ব্যস্ত হলেন? জবাবে আব্দুল মুত্তালিব  বলেন ওই ঘরের মালিক যিনি তিনিই তার ঘরের হেফাজত করবেন। আমি তার মালিক নই ।আমি যেসব উটের মালিক তা আমাকে দিয়ে দিন ।তখন আবরাহা তাঁর উটগুলো ফিরিয়ে দিল। 

এরপর আবরাহা  যখন মক্কার দিকে এগিয়ে আসতে চাইল তখন তাঁর নিজস্ব হাতি মাহমুদ হঠাৎ বসে পড়ল এবং মাহুত তাকে মেরে জখম করা সত্ত্বেও মক্কার দিকে এক কদমেও এগোতে রাজি হলো না। এই সময় হঠাৎ বিরাট একদল পাখি ঠোঁটে ও পায়ে করে কঙ্কর নিয়ে এসে সেই বাহিনীর উপর বৃষ্টির মত ফেলতে লাগলো। যার উপরে সেই পাথর পড়তো তার শরীর গলে যেতো । গায়ের গোস্ত খুলে পড়তে এবং রক্ত পানির মত বয়ে যেত। আবরাহা  এইভাবে মরে গেল। ৬০ হাজারের গোটা বাহিনী পালাতে থাকলো ও পথে পথে মরতে মরতে শেষ হয়ে গেল। 

এই ঘটনা রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) জন্মের 50 দিন আগে ঘটেছিল। আরবের এই ঘটনা খুব বিখ্যাত ছিল। সূরা ফীল নাযিল হওয়ার সময় মক্কার হাজার হাজার এমন লোক জীবিত ছিল যাদের চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে । সমস্ত আরববাসী একথা স্বীকার করত যে, একমাত্র আল্লাহর কুদরতেই  ঐ বাহিনী ধ্বংস হয়েছিল। 

No comments:

Post a Comment